শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৪ অপরাহ্ন

রং তুুলির আচড়ে বদলে যাচ্ছে চবির দেওয়ালের চিত্র

রং তুুলির আচড়ে বদলে যাচ্ছে চবির দেওয়ালের চিত্র

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টের রাস্তা থেকে শুরু করে দেয়ালে দেয়ালে শিল্পকর্ম আঁকছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীরা। স্বেচ্ছায় এতে অংশ নিয়েছেন তারা। যারা কাজটি করছেন তাদের মধ্যে সকলের নেই কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা। তাদের লক্ষ্য নান্দনিক এই ক্যাম্পাসকে রঙিন করে গড়ে তোলা। রঙতুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছেন প্রতিবাদ, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও দেশপ্রেম।শিক্ষার্থীদের এ কার্যক্রমের মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে এই বাংলাদেশ সবার। কোনো স্বৈরাচারের ঠাঁই নেই এ দেশে। ছাত্র সমাজ একতাবদ্ধ হয়েছে সব অনিয়মের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ছাত্রলীগ,ছাত্রদল অনান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর আঁকা গ্রাফিতি ও দেওয়াল লিখন ছাত্র রাজনীতি প্রচার করায় তা মুছে ফেলা হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার ছাত্র রাজনীতি থাকবে না।

চবির চারুকলা বিভাগের  চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিনা ইয়াসমিন প্রমি বলেন,আমরা কয়েকদিন ধরেই গ্রাফিতির কাজ করতেছি।ক্যাম্পাসের রাস্তায়, দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান, আন্দোলনের ভাষা, স্বাধীনভাবে লিখতেছি। ৫ আগস্টের আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন নিয়ে কোন ধরনের স্লোগান লিখা হয়নি। তখন স্বাধীনভাবে কোন শিক্ষার্থী মুক্ত চিন্তা করতে পারেনি।কয়েকজন মেয়ে শিক্ষার্থী রাস্তায় লিখা লিখেছিল আন্দোলন নিয়ে সেই লিখাগুলো প্রশাসন থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল।আমরা এখন স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। আমরা চেষ্টা করতেছি  চবিয়ান সবাইকে যুক্ত করতে যাবে সবাই একতাবদ্ধ হয়ে থাকতে পারে। এই একতাবদ্ধতা তৈরী হবে কাজের মাধ্যমে।আমরা গ্রাফিতির কাজ করার পরিকল্পনা করেছি অনেক আগে থেকেই। বৃষ্টির কারণে একটু দেরী হয়ে গেছে। আজকে আমরা অনেক সাড়া পেয়েছি শিক্ষার্থীদের।

প্রায় ২০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী এসেছে গ্রাফিতির কাজের জন্য।এই বিষয়টা আমাদের অনেক ভালো লেগেছে যে সবাই আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে।কারো মনে কোন ধরনের নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা নেই। রাস্তায়,দেয়ালে অনেক রাজনীতি দলের বিভিন্ন শ্লোগান লিখা ছিল।  আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো সেগুলো মুছে দিয়ে আন্দোলনের স্লোগান গুলো লিখা। আমাদের কাজ করার মতো মানুষ কম তাই একটু দেরী হচ্ছে। চবিতে যে পরিমান শিক্ষার্থী সবাই একসাথে সাড়া দিলে একদিনে ক্যাম্পাসকে রাঙিয়ে তোলা যেতো।আলপনা আঁকা ছাড়া রাজনৈতিক চিহ্ন গুলো মুছে দেওয়া সম্ভব হতো না। তাই আগে আলপনা আঁকা হয়েছে। মানুষ বাড়িতে বসে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে।  প্রকৃত পক্ষে ক্যাম্পাসে আমরা গ্রাফিতি করছি কেউ বাধা দেয়নি। সবাই এসে সংবর্ধনা দিচ্ছে। আমাদেরকে শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা এসে খাবার দিয়ে গেছে। এগুলো আমাদেরকে কাজ করার জন্য অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে।

সৈয়ব আহমেদ সিয়াম বলেন, “পরাধীনতার শেকল ছিঁড়ে আমরা চব্বিশে স্বাধীনতার নতুন সূর্য পেয়েছি। সত্য আর সুন্দরের কথা বলতে আমাদের আর বাধা নাই। আমরা বাংলা, ইংরেজি, আরবি সব ভাষায় গ্রাফিতি করার অধিকার রাখি। স্বাধীনতা আর অধিকারের স্লোগানে স্লোগানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলো ভরিয়ে দিয়েছি আমরা। তারপর, ‘চবিয়ান দ্বীনি পরিবার’ প্লাটফর্ম থেকে আমরা ভাবলাম, বাংলা আর ইংরেজির মতো আরবিতেও কিছু ক্যালিওগ্রাফি থাকুক এই ক্যাম্পাসে। যেই ভাবা, সেই কাজ। আমরা শাহজালাল হলের দেয়াল রাঙিয়ে দিলাম আরবি ক্যালিওগ্রাফির রঙে। অনেকেই ছবি  তুলে পোস্ট করতেছেন এখন। এই তো স্বাধীনতা। সবাই বলতে পারছে, আঁকতে পারছে।”

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২১ সেশনের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, “ক্যাম্পাসে বিপ্লবের চিহ্ন রাখতে অনেক গ্রাফিতি করেছি আমরা। চারুকলার ভাইবোনেরা সুন্দর সব আল্পনা করেছেন। তো এই ক্যাম্পাসে তো আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এসব ডিপার্টমেন্টও আছে। চব্বিশে তারুণ্যের এই বিজয়ে সবার অংশগ্রহণ রয়েছে। সবার চিহ্নই ফুটে উঠুক ক্যাম্পাসে। এই আশা নিয়ে শাহজালাল হলের দেয়ালে আমরা আরবি ক্যালিওগ্রাফি করেছি।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |